Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কালিজিরা ম্যাজিক ফসল

কালিজিরার ইংরেজি নাম Fennel flower, Nutmeg flower, Roman Coriander, Blackseed or Black caraway| অন্যান্য বাংলা নাম কালিজিরা, কালোজিরা, কালো কেওড়া, রোমান ধনে, নিজেলা, কালঞ্জি এসব। যে নামেই ডাকা হোক না কেন এ কালো বীজের গুণাগুণ স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম অসাধারণ কালজয়ী। কালিজিরার আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। কেউ কেউ বলেন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এর উৎপত্তি স্থান। ওষুধ শিল্প, কনফেকশনারি শিল্প ও রন্ধনশালায় নিত্যদিনের ব্যঞ্জরিত খাবার তৈরিতে কালিজিরার জুড়ি নেই। বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি পানীয় দ্রব্যকে রুচিকর ও সুগন্ধি করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে মসলা ফসলের মধ্যে কালিজিরার ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম। মসলা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার আছে বিশ্বব্যাপী। পাঁচ ফোড়নের একটি অন্যতম উপাদান। কালিজিরা আয়ুর্বেদীয়, ইউনানি, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহু রকমের ব্যবহার আছে। প্রসাধনীতেও ব্যবহার হয়। কালিজিরার যে অংশটি ব্যবহার করা হয় তাহলো শুকনো বীজ ও বীজ থেকে পাওয়া তেল। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালিজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসেবে বিশ্বাস করে। হাদিসে আছে কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত অন্য সব রোগ নিরাময় করে। এজন্য কালিজিরাকে সব রোগের ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নিয়মিত ও পরিমিত কালিজিরা সেবনে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি সমৃদ্ধি সাধন করে। আশ্চর্য বীজ কালিজিরার উপকারিতা বহুমুখী।   
 

কালিজিরার বোটানি
কালিজিরা মাঝারি জাতীয় নরম মৌসুমি গাছ, একবার ফুল ও ফল হওয়ার পর মরে যায়। পাতা সরু ও চিকন, সবুজের মধ্যে ছাই-ছাই রঙ  মেশানো। পত্রদ-ের দুই দিকে যুগ্ম বা জোড়া পাতা ধরে সোজা হয়ে জন্মায়। পাতাগুলো ছোটো ফলকের মতো বিভাজিত অবস্থায় দেখা যায়। স্ত্রী, পুরুষ দুই ধরনের ফুল হয়, নীলচে সাদা কিংবা জাত বিশেষে হলুদাভ পীত বর্ণেরও হয়। পাঁপড়ি পাঁচটি, ফল গোলাকার, কিনারায় আঁকর্শির মতো বাড়তি অংশ থাকে। পুংকেশরের সংখ্যা অনেক। গর্ভকেশর বেশ লম্বা হয়। বীজ কালো রঙের তিনকোণা আকৃতির। বীজগুলো বীজকোষ খাঁজ আকারে ফলের সাথে লম্বালম্বিভাবে থাকে। বীজে তেল থাকে। গাছ লম্বায় জাতভেদে ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। প্রতি গাছে ৫ থেকে ৭টি প্রাথমিক শাখা এবং ২০ থেকে ২৫টি ফল থাকে। প্রতিটি ফলের ভেতর ৭৫ থেকে ৮০টি বীজ থাকে যার গড় ওজন ০.২০ থেকে ০.২৭ গ্রাম। বারি কালিজিরা-১ এর প্রতিটি গাছে ৫ থেকে ৭ গ্রাম বীজ হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম বীজের ওজন ৩.০ থেকে ৩.২৫ গ্রাম। বীজ পরিপক্ব হতে ১৩০ থেকে ১৪৫ দিন সময় লাগে। দেশি জাতের কালিজিরা পরিপক্ব হতে আরেকটু কম সময় লাগে। বাংলা কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে এর ফুল ফোটে এবং শীতকালে ফল ধরে, শীতের শেষে ফল পাকে।

 

কালিজিরার পুষ্টিগুণ
কালিজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান আছে। কালিজিরা খাদ্যাভাসের ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালিজিরা ফুলের মধু উৎকৃষ্ট মধু হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিবেচিত, কালোজিরার তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বর্তমানে কালিজিরা ক্যাপসুলও বাজারে পাওয়া যায়। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাব বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক। এর প্রধান উপাদানের মধ্যে আমিষ ২১, শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ বা ভেষজ তেল ও চর্বি ৩৫ শতাংশ। এছাড়াও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে। প্রতি গ্রাম কালিজিরা পুষ্টি উপাদান হলো-প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম; ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম; নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম; ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম; আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম; ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম; কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম; জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম; ফোলাসিন ৬১০ আইউ। কালিজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আরও আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। পাশাপাশি কালিজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান যা হাজারও উপকার করে।

 

কালিজিরার ঔষধি গুণ
কালিজিরা আয়ুর্বেদীয়, ইউনানি, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহুবিধ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার হয়। মসলা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হলেও ইউনানি মতে নারীদের বিভিন্ন রোগে ও সমস্যায় কালিজিরা অব্যর্থ মহৌষধ। এছাড়া প্রসবকালীন ব্যথা কমাতে, প্রসূতির স্তনে দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য প্রসবোত্তর কালিজিরা বাটা ভর্তা খাওয়ার প্রমাণিত উপকারী বিধান আছে। প্রশ্বাব বাড়ানোর জন্য কালিজিরা খাওয়া হয়। জ্বর, সর্দি, কাশি, কফ, অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ব্যথা ও দাঁতের ব্যথা, বাতের ব্যথা, পেটের বাথা, মাথাব্যথা কমাতে, মাথা ঝিমঝিম করা, মাইগ্রেন নিরাময়ে যথেষ্ট উপকারী বন্ধু হিসেবে কাজ করে। পেটফাঁফা, চামড়ার ফুসকুরি, ব্রঙ্কাইটিস, এলার্জি, একজিমা, এজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ; ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাসট্রিক আলসার, জন্ডিস, খোসপাঁচড়া, ছুলি বা শ্বেতি, অর্শরোগ, দাদে কালিজিরা অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। স্নায়ুবিক উত্তেজনা; উরুসদ্ধি প্রদাহ; আঁচিল; স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে; শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে, স্ট্রোক, স্থূলতা নিরাময়ে দারুণ কাজ করে কালিজিরা। গায়ের ব্যথা দূর করতে কালিজিরা বিশেষভাবে উপকার করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালিজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কালিজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, বহুমূত্র  রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় ইনসুলিন সমন্বয় করে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করে। হার্টের বিভিন্ন সমস্যা, হাইপারটেনশন, নিম্ন রক্তচাপকে বাড়ায় আর উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে রক্তের স্বাভাবিকতা রক্ষা করে। এছাড়া মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

 

কালিজিরার বিশেষত্ব
কালিজিরার তেলের উপকার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, হৃদরোগজনিত সমস্যার আশঙ্কা কমায়, ত্বকের সুস্বাস্থ্য, আর্থাইটিস ও মাংসপেশির ব্যথা কমাতে কালিজিরার তেল উপযোগী। কালিজিরা শরীরের জন্য খুব জরুরি।  পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে। কালিজিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে। কালিজিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত হয়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর অনিদ্রা দূর করে প্রশান্তির নিদ্রা হয়। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু করে শরীরের কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কালিজিরা। শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা কমায়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে যেসব সমস্যা হয় সেসবের যন্ত্রণাকর উপসর্গের তীব্রতা কমাতে পারে কালিজিরা। রিউমেটিক ফিভার পিঠে ব্যথা কমাতে কাজ করে। হাঁটুর/বাতের ব্যথা, স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও উন্নয়ন; মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। দেহের সাধারণ উন্নতি; চেহারার কমনীয়তা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে টনিকের মতো কাজ করে।


বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ সারাতে; শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি করতে; স্বাস্থ্য ভালো রাখতে; হজম সমস্যা দূরীকরণে; লিভারের সুরক্ষায়; দেহের সাধারণ উন্নতি; রুচি বাড়াতে, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, যকৃতের বিষক্রিয়ানাশক, প্রতিরোধক। টিউমার এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালিজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি, মস্তিষ্ক শক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালিজিরা অব্যর্থ উপযোগী দাওয়াই। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু এবং দেহের কাটা-ছেড়া শুকানোর জন্য কাজ করে। এছাড়া শরীরে সহজে ঘা, ফোঁড়া, সংক্রামক রোগ বা ছোঁয়াচে রোগ হয় না। কিডনির পাথর দূর করতে ও ব্লাডার সুরক্ষায়। তারুণ্য ধরে রাখতে মধ্যপ্রাচ্যে কালিজিরা খাওয়াটা দীর্ঘদিনের রীতি। কাজ করার শক্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে কালিজিরা।


কালিজিরার তেলে রয়েছে খিদে বাড়ানোর উপাদান। অন্ত্রের জীবাণুকে নাশ করে শরীরের জমে থাকা গ্যাসকেও দূর করতে কালিজিরার বিকল্প নেই। যারা মোটা হতে চান, তাদের জন্য কালিজিরা একটা ভালো পথ্য। আবার যারা চিকন হতে চান তারাও নিয়ম করে কালিজিরা খেলে কাজ হয়। বয়স হলে হাত পা ফুলে যাওয়াটা একটা বড় সমস্যা। কালিজিরা এ সমস্যা সমাধান দেয়। কালিজিরা শিশুদের ক্ষেত্রে মেধার বিকাশ ঘটে। অ্যান্টিসেপটিক বলেও অনেক ভেষজবিদ মনে করেন। দেহের কাটা-ছেড়া শুকানোর জন্য কাজ করে। কালোজিরায় রয়েছে শরীরের রোগজীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এ উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোঁড়া, সংক্রামক রোগ বা ছোঁয়াচে রোগ হয় না।


কালিজিরার ব্যবহার কৌশল
কালিজিরা মসলা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হয়। এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। কালিজিরা সরাসরি তেল হিসেবে, কাঁচা চিবিয়ে, ভেজে পরিমাণমতো খাওয়া যায়। সরাসরি খাওয়ার থেকে শুরুতে ভাত রুটি বা মুড়ির সাথে কালিজিরা খাওয়াটা অভ্যাস করতে পারলে ভালো। যখনই গরম পানীয় বা চা পান করা হয় তখনই কালিজিরা কোনো না কোনোভাবে সাথে খাওয়া ভালো। গরম খাদ্য বা ভাত খাওয়ার সময় কালিজিরা বেশ উপকারী। কালিজিরা একটা দারুণ ঘরোয়া ওষুধ। দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালিজিরা দিয়ে কুলকুচ করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে স্বস্তি এনে দেবে। জিহ্বা, টাকরা বা মাড়িতে থাকা খাদ্যের জীবাণু সহজেই মরে যায়। ফলে মুখে আর দুর্গন্ধ হয় না। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে চুলের গোড়া শক্ত করে ও চুল পড়া কমায় বন্ধ করে। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে পরিবেশের প্রখরতা, স্ট্রেস থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বককে সুন্দর করে ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে। কালিজিরা তরকারির সাথে রান্না করে, ভর্তা করে, চাটনি করে খাওয়া হয়। মিষ্টি, কেক, হালুয়া, ফিরনি, বিস্কুট, বরফি এসবের সাথে দেয়া যায়। বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাদ্যপণ্যে কালিজিরা মেশানো হয়। কালিজিরা খেলে অপারেশনের দাগ দূর হয়, ব্রেইন টনিক হিসেবে কাজ করে। কালিজিরার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আশ্চর্যজনকভাবে অতুলনীয়, আর তা কালোজিরার রস/তেলের মধ্যেই আছে। ফলে কালিজিরার তেল ব্যবহার ও সেবন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উত্তরোত্তর বাড়ায় এবং রোগমুক্ত রাখে। তিলের তেলের সাথে কালিজিরা বাটা বা কালোজিরার তেল মিশিয়ে ফোঁড়াতে লাগলে, ফোঁড়ার উপশম হয়। মধু ও কালিজিরার পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগিয়ে আধাঘণ্টা বা একঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেললে ত্বক উজ্জ্বল হয়। নিয়মিত লাগালে ব্রণ দূর হবে। প্রত্যেকের রান্নাঘরেই কালিজিরা থাকে যা খাবারকে সুবাসিত সুরক্ষা করে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ব্যাখ্যা
অন্যান্য সব ভেষজের মতো কালিজিরা নিয়েও গবেষণা কম হয়নি। ১৯৬০ সালে মিসরের গবেষকরা নিশ্চিত হন যে, কালিজিরা নাইজেলনের কারণে হাঁপানি উপশম হয়। জার্মানি গবেষকরা বলেন, কালোজিরার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-মাইকোটিক প্রভাব রয়েছে। এটি বোনম্যারো ও প্রতিরক্ষা কোষগুলোকে উত্তেজিত করে এবং ইন্টারফেরন তৈরি বাড়িয়ে দেয়। আমেরিকার গবেষকরা প্রথম কালিজিরার টিউমারবিরোধী প্রভাব সম্পর্কে মতামত দেন। শরীরে ক্যান্সার উৎপাদনকারী ফ্রির‌্যাডিক্যাল অপসারিত করতে পারে কালিজিরা। পারকিনসন্স রোগের প্রতিকারে, কালিজিরায় থাইমোকুইনিন থাকে যা পারকিনসন্স ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের দেহে উৎপন্ন টক্সিনের প্রভাব থেকে নিউরনের সুরক্ষায় কাজ করে। ক্ষতিকর জীবাণু নিধন থেকে শুরু করে শরীরের কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কালিজিরা।
Medical Science Monitor Journal এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, নিয়মিত কালিজিরা খেলে মৃগীরোগ, শিশুদের হৃৎপি-ের অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। কালিজিরায় খিঁচুনি বন্ধ করার উপাদান থাকে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিরাময় করে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, প্রতিদিন ২ গ্রাম কালিজিরা খেলে রক্তের সুগার লেভেল কমায়, ইনসুলিনের বাঁধা দূর করে এবং অগ্নাশয়ে বিটা কোষের কাজ বাড়ায়। কালিজিরা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এটি সহজেই শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংস করে দিতে পারে। এ অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদানের জন্য দেহের ঘা, ফোঁড়া কম সময়েই সেরে যায়। একদিকে প্রস্টেটজনিত সমস্যা সে সাথে কিডনিজনিত রোগে কম বেশি বয়স্করা পা ফোলা সমস্যায় ভোগেন। কালিজিরা তাদের এ সমস্যা রুখতে পারে সহজেই। প্রত্যেকের রান্নাঘরেই কালিজিরা থাকে যা খাবারকে সুবাসিত করে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পেরেছেন যে কালোজিরার সব গুণ লুকিয়ে আছে এর তেলে। এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, কালিজিরা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে পারে এবং রক্তচাপ কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে পারে।


কালিজিরার সর্তকতা
কালিজিরা নিয়মিত ও পরিমিত খেতে হয়। অতিরিক্ত খুব বেশি খেলে বা ব্যবহার করলে হিতের বিপরীত হয়। কালোজিরার তেল গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কালিজিরা খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। কালিজিরা গ্রহণ করার সবটাই করতে হবে পরিমিত পর্যায়ে। অনেকেই কালিজিরা হজম করতে পারেন না। তবে আস্তে আস্তে অভ্যাস করলে ভালো। যারা সহজে কালিজিরা হজম করতে পারেন না তারা খাবেন না, যারা পারেন তারাই নিয়মিত পরিমিত খাবেন। গর্ভাবস্থায় ও দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালিজিরার তেল সেবন করানো উচিত নয়। নকল বা কৃত্রিম কালিজিরার তেল কখনও খাওয়া ঠিক না। জেনে শুনে বুঝে নিশ্চিত হয়ে কালিজিরা বা কালিজিরার তেল সরাসরি বা প্রক্রিয়াজাত করে খেতে হবে। পুরনো কালিজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।


কালিজিরার উৎপাদন কৌশল
শুকনা ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া কালিজিরা আবাদে খুব অনুকূল। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আবহাওয়া বালাইয়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফুল ফোটার সময় বৃষ্টি হলে কালিজিরার ফলন কমে যায়। ৩ থেকে ৪টি চাষ ও আড়াআড়ি মই দিয়ে মাটি ঝুরাঝুরা করে আগাছা পরিষ্কার করে জমি সমতল করে বীজ বপন করতে হয়। অল্প পরিমাণ এক বিঘা বা তার কম জমিতে চাষ করলে ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চি উঁচু খ-িত বেড তৈরি করা ভালো।


বপন : অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায়। তবে নভেম্বর মাসের প্রথম-দ্বিতীয় সপ্তাহ বীজ বপন করার উত্তম সময়।  অগ্রহায়ণের শেষ থেকেই লাগানো যায়। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে পৌষের প্রথমে লাগানো ভালো। সফলভাবে কালিজিরা উৎপাদনের জন্য ১৫x১০ সেন্টিমিটার দূরত্বে লাইনে বীজ বপন করলে ভালো হয়। ১-৪ ইঞ্চি গর্ত করে প্রতি গর্তে ২-৩টি করে বীজ পুঁততে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বীজ যেন বেশি গভীরে না যায়। বীজ বপনের আগে আলাদা করে শোধনের দরকার নেই। তবে বোনার আগে ভালো করে ধুয়ে ধুলাবালি ও চিটা বীজ সরিয়ে নেয়া ভালো। ভেজা বীজ বপন করা উচিত না। ১ বিঘা জমিতে ১ কেজি থেকে ১.৫ কেজি বীজ লাগে। হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে ৬ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। তবে লাইনে লাগালে ৩.৫ কেজি থেকে ৪.৫ কেজি বীজই যথেষ্ট।


সার প্রয়োগ : জমি তৈরির সময় ছাড়া পরে আর সার দেয়া তেমন প্রয়োজন নেই। জৈব ও অজৈব সারের সমন্বয়ে হেক্টরপ্রতি সারের পরিমাণ হলো পচা গোবর ৫ থেকে ১০ মেট্রিক টন, ইউরিয়া ১২৫ কেজি, টিএসপি ৯৫ থেকে ১০০ কেজি, এমওপি ৭৫ কেজি। জমি তৈরি ও শেষ চাষের সময় জৈবসার, অর্ধেক ইউরিয়া, পুরো টিএসপি ও এমওপি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপনের ৪০ দিন পর বাকি ইউরিয়া উপরিপ্রয়োগ হিসেবে জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। কেউ কেউ ভালো ফলনের জন্য খৈল ব্যবহার করেন।
পরিচর্যা : বীজ লাগানোর পরই হালকা করে মাটি দিয়ে গর্ত ঢেকে দিতে হবে। পাখিতে বীজ খেতে না পারে, সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া প্রয়োজন হলে আগাছা পরিষ্কার, গাছ পাতলাকরণ কাজগুলো নিয়মিত ও পরিমিতভাবে করতে হবে।


সেচ ও নিকাশ : সাধারণত সেচের প্রয়োজন নেই। তবে নতুন চারা লাগানোর পর রোদ বেশি হলে ছিটিয়ে পানি দেয়া যায়। সন্ধ্যায় পানি ছিটিয়ে দেয়া ভালো। জমিতে রস না থাকলে বীজ বপনের পর হালকা সেচ দিতে হবে। তবে প্লাবন সেচ দিলে বীজ এক জায়গায় জমা হয়ে যেতে পারে। মাটির ধরন আর বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে পুরো জীবনকালে ২-৩ বার সেচ দিতে হবে। কোনো কারণে জমিতে পানি জমলে দ্রুত নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।


বালাই ব্যবস্থাপনা : কালিজিরা সহজে তেমন কোনো পোকামাকড়ে আক্রান্ত করে না। বরং এর স্বাভাবিক পোকামাকড় ধ্বংসের ক্ষমতা আছে। সে রকম রোগবালাইও তেমন হয় না। মাঝে মাঝে কিছু ছত্রাক আক্রমণ দেখা দিলে রিডোমিল গোল্ড বা ডাইথেন এম ৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ২-৩ বার ১০ দিন পরপর ছিটিয়ে দিতে হবে।
 

জীবনকাল : অংকুরোদগম-চারা গজানো- ১২-১৬ দিন; গাছের বৃদ্ধি- ৩০-৪০ দিন; ফুল আসবে ৩৫-৪২ দিন; ফল আসবে ৪২-৫৫ দিন; ফল পাকবে : ৬০ থেকে ৮৫ দিন। বীজ বপনের পর সর্বমোট ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনে গাছ হলদে বর্ণ ধারণ করে মরে যায়। ১৫-২০ সপ্তাহের মধ্যে ফসল পাকবে ও তোলার সময় হবে অর্থাৎ পৌষের প্রথমে চাষ করলে ফাল্গুন-চৈত্রে ফসল তোলা যাবে।


ফসল সংগ্রহ ও ফলন : ১ বিঘা জমিতে চাষ করলে গড়ে ৯০ থেকে ১১০ কেজি কালিজিরা পাওয়া যাবে। একরপ্রতি ৩০০ কেজি থেকে ৩৩০-৩৪০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বারি কালিজিরা-১ সঠিক পরিচর্যায় হেক্টরপ্রতি ১ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন দেয়। ফাল্গুন-চৈত্রে গাছ মরে গেলে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করে ২ দিন রোদে শুকিয়ে নিয়ে হাতে সাবধানে আঘাত করে মাড়াই করে বা লাঠি দিয়ে বীজ সংগ্রহ করা যায়। গাছে সামান্য রস থাকতেই ফল সংগ্রহ করা উচিত, তা নাহলে বীজ জমিতে ঝরে পড়তে পারে। বীজ রোদে শুকিয়ে ঠাণ্ডা করে কুলা দিয়ে পরিষ্কার করে চটের বস্তায় বা মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে অন্তত এক বছর পর্যন্ত বীজ ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়। মানসম্মত বীজ সংরক্ষণে পাত্র শুকনো, ঠাণ্ডা, অন্ধকার জায়গায় রাখতে হবে।


কালিজিরা প্রকৃতির এক অভাবনীয় গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান নিয়ামত। নিয়মিত পরিমিত কালিজিরা খেলে ব্যবহার করলে তা শরীরের ভেতরের ও বাহিরের অংশের জন্য উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধে কালোজিরার মতো এত সহজে এত কার্যকর আর কোনো প্রাকৃতিক উপাদান আছে বলে জানা যায়নি। কালিজিরাকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন এ কালো বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম। কালিজিরা সব ধরনের রোগের বিরুদ্ধে তুলনাহীন। কালিজিরাকে সব রোগের মহৌষধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এত কম দামে এত বহুমুখী উপকারিতা সম্পন্ন কালিজিরা সব ধরনের রোগের বিরুদ্ধে তুলনাহীন তো বটেই তার ওপরে শরীরের হাজারো উপকার করে। বাণিজ্যিক বা পারিবারিক প্রয়োজনে সামান্য এক টুকরো জমিতে পরিকল্পিতভাবে কালিজিরা চাষ করে নিজেদের বার্ষিক প্রয়োজন মেটানো যায়। সুতরাং সুন্দর সুস্থ সবল সুস্বাস্থ্যের জন্য কম দামি দাওয়াই, পথ্য, ভেষজ উপাদান আর পুষ্টি উপাদান হিসেবে নিয়মিত ও পরিমিত কালোজিরার চাষ করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে সবাইকে নিজেদের জন্য আবশ্যকীয়ভাবে। তখন লাভ হবে নিজেদের, লাভ হবে জাতির। সমৃদ্ধ হবে কৃষি ভাণ্ডার।

 

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*
*পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা subornoml@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon